তাদের সব কিছুই যেন এক সুতোয় গাঁথা

উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি) 

১৯ বছর আগে এক থেকে দেড় মিনিটের ব্যবধানে জন্ম অবনী হক অর্পা ও অতুন হক অর্থির। একই রকম পোশাক পরেন। একজন অসুস্থ হলে আক্রান্ত হন অন্যজনও। চিন্তা-চেতনায় তারা যেন এক সত্তা। জীবনের যত অর্জন, সাফল্যও একই রকম। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দুই বোনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে একই নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। জন্মের মতোই সব কিছুই যেন তাদের এক সুতোয় গাঁথা। সব কিছুতেই তাদের বিস্ময়কর মিল।

উল্লাপাড়া উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চক বরুয়া গ্রামের স্কুলশিক্ষক এস এম আমিনুল ইসলাম স্বপন ও পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক লাভলী খাতুন দম্পতির মেয়ে অর্পা ও অর্থি। এ বছর তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। ভর্তি পরীক্ষায় পৃথক দুটি ভবনে বসে পরীক্ষা দিলেও দু’জনের প্রাপ্ত নম্বর ৫৩ এবং মেধা স্কোর ৭২.৮৮। ফলাফলের মেধাক্রম যথাক্রমে ১৬৩৬ ও ১৬৩৭।

তাদের অতীতের শিক্ষা জীবনের ফলাফলেও রয়েছে মিল। ২০১২ সালে তারা স্থানীয় দবিরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। ২০১৫ সালে পুস্তিগাছা বনানী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অর্পা ও অর্থি উত্তীর্ণ হয় গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়ে। ২০১৮ সালে সিরাজগঞ্জ সবুজ কানন স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উভয়ই জিপিএ ৪.৯৪ পেয়ে একই ফলাফল করেন। ২০২০ সালে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায়ও দু’জনই গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছেন। একসঙ্গে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের স্কলারশিপ পেয়েছেন।

রোববার অর্পা ও অর্থির বাড়িতে গিয়ে কথা বলে তাদের শিশুবেলা থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন কার্যক্রম, অর্জন ও সাফল্যের কথা জানা যায়।

তাদের বাবা এস এম আমিনুল ইসলাম স্বপন জানান, অর্পা-অর্থির জন্মের পার্থক্য দেড় থেকে দুই মিনিট। ছোটবেলায় একজন অসুস্থ হলে আক্রান্ত হতো অন্যজনও। সুস্থ হতো একই সঙ্গে। তিনি তার সন্তানদের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।

অর্পা ও অর্থি জানান, দু’বোন একসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত। ভবিষ্যতে লেখাপড়া শেষ করে একই সঙ্গে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস)পরীক্ষা দিয়ে চাকরি জীবনে প্রবেশ করতে চান। এ ছাড়া তাদের বড় চাওয়া আদর্শ মানুষ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে দেশের সেবায় নিয়োজিত হওয়া।

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম হিরো জানান, অর্পা ও অর্থি তাদের ইউনিয়নের গর্ব। দু’জনই লেখাপাড়ায় খুব ভালো করছে। তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে বলে তিনি আশাবাদী।